আমাদের প্রিয় নবী, শেষ নবী, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, ছন্দ শেয়ার করতে চান। কেউ কেউ দুই শব্দ লেখে আর এগোতে পারেন না, চিন্তা করেন কী থেকে কী লিখবেন। তাদের কষ্ট সহজ করতেই এই লেখার আয়োজন।
এই লেখাতে আজকে আমরা শেয়ার করবো নবীকে নিয়ে স্ট্যাটাস, প্রিয় নবীর বলে যাওয়া মহামূল্যবান হাদিস, উক্তি ও আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলার জন্য তাঁর বলে দেওয়া সঠিক দিকনির্দেশনা।
যারা মহানবীকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস শেয়ার করতে চান, তারা নতুন নতুন ক্যাপশন, ছন্দ, হাদিস ও নবীর উক্তিগুলো এই লেখা থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
নবী কে নিয়ে স্ট্যাটাস ২০২৬
প্রিয় নবীকে নিয়ে মনের ভিতরে জমানো অনুভুতি শেয়ার করতে বেছে নিন সুন্দর সুন্দর নবী কে নিয়ে স্ট্যাটাস এই সেকশন থেকে।
ইয়া আল্লাহ আমাকে ঠিক ততটা পরিবর্ত্ন করে দিন, যতটা পরিবর্ত্ন হলে আপনার ও নবী কারীম (সাঃ) এর প্রিয় ব্যক্তি হতে পারি।
আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান বলেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হতে পেরেছি। আলহাদুলিল্লাহ।
শেষ নবীর উম্মত হতে পেরে আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া। আলহাদুলিল্লাহ।
যে হৃদয়ে নবীর প্রতি ভালোবাসা আছে, সেই হৃদয় কখনো অন্ধকারে থাকে না।
নবী ﷺ-এর আদর্শই আমাদের জীবনের আলো, শান্তি, দয়া আর সত্যের পথ।
নবীর সুন্নাহ মানলে জীবন সহজ হয়, আর হৃদয় হয় শান্তির সমুদ্র।
নবীর নাম নিলেই হৃদয় নরম হয়ে যায়, কারণ তাতে আছে রহমতের সুবাস।
নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ, যত বাড়ে, তত বাড়ে রুহের সৌন্দর্য।
নবী প্রেমের উক্তি
যার হৃদয়ে নবী (সা.)-এর প্রতি প্রেম আছে, তার জীবনে অন্ধকার কখনও স্থায়ী হয় না।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসা মানে তার সুন্নাহকে জীবনে ধারণ করা।
নবী (সা.)-এর প্রেম মানুষকে নম্র করে, শান্ত করে, আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়।
যে নবীজিকে ভালোবাসে, সে কখনো একা হয় না, তার পথের আলো নবীর সুন্নাহ।

হৃদয়ে নবী প্রেম থাকলে দুনিয়া কঠিন হলেও, মন থাকে আলোকিত।
নবী (সা.)-এর চরিত্রে ছিল পূর্ণতা; তার প্রেমে ছিল রহমত।
নবীর প্রেমে চোখের পানি পাপ ধুয়ে ফেলে।
যে তার প্রিয় নবীর (সা.) অনুসরণ করে, সে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার পথ পেয়ে যায়।
মহানবীর বাণী ইসলামিক উক্তি
প্রিয় নবীর দেখানো পথে চলতে তার ও তার দেখানো পথ সম্পর্কে অন্যদের জানাতে বেছে নিন মহানবীর জনপ্রিয় হাদিস, উক্তিগুলো এই সেকশন থেকে।
নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘুমাতে যাওয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পড়েবে, আল্লাহ তার জন্য একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করবেন, যে তাকে সকাল পর্যন্ত পাহারা দিবে। -(বুখারী ২৩১১)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শক্তিশালী সেই ব্যক্তি নয়, যে কুস্তিতে জয়ী হয়, বরং শক্তিশালী সেই যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। ( সহীহ বুখারী ৬১১৪)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, খাবার খেয়ে শুকরিয়া আদায়কারী রোজাদারদের ন্যায় মর্যাদাপ্রাপ্ত হবে। ( তিরমিজি, ২৪৮৬)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে যুবক যুবতী যৌবনে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকবে, আল্লাহ তা’য়ালা তাকে আরশে পাকের ছায়া তলে আশ্র্য দান করবেন। ( সহীহ বুখারী ৬৮০৬)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি বিধবা ও অভাবগ্রস্তদের দেখা শোনা করে, সে আল্লাহ পথে জিহাদ কারীদের মতো। ( সহীহ বুখারী ৬০০৬)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেনো ভালো কথা বলে, না হলে চুপ থাকে। ( বুখারী ৬০১৮)
নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি প্রিয়, যে বিনয়ী ও নম্র। ( তিরমিজি, হাদিস ২০২৯)

রাসুল (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি অন্যের গুনা নিয়ে খুটা দেয়, তাকে সেই গুনা কাজ করারনোর আগে মৃত্যু দেন না। ( তিরমিজী ২৬০৫)
নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, মৃত্যুর পর তাদের মাথায় পাথর ভাঙ্গা হবে, যারা ফজরের নামাজ না পড়ে ঘুমিয়েছিলো, এবং কুরআন গ্রহন করে তা ছেড়ে। ( বুখারী ৭০৪৭)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম যে গাছ লাগায়, আর তা থেকে কোন মানুষ, কোন জন্তু এবং কোন পাখি যা কিছু খায়। তবে তার জন্য সদকা হয়ে যায়। ( বুখারী ২৩২০)
মহানবী সাঃ এর মহামূল্যবান বাণী
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যারা জমিনে বসাবাসকারীদের প্রতি দয়া করে, আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। -(জামে তিরমিজ (হাদিস ১৯২৪)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোনো মিসকিনকে সদকা করলে একটি সওয়াব হয়, আর আত্মীয়কে দিলে দ্বিগুন সওয়াব হয়। একটি সদকার সওয়াব অন্যটি অত্মীয়তার রক্ষার সওয়াব। -(তিরমিজী ৬৫৮; ইবনে মাজাহ ১৮৪৪)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সত্যিকারের ঈমানের সাথে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে মৃত্যু বরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করে। ( শীহ বুখারী, হাদিস ৬৪৪৩)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাগ সংবরণ করে অথচ তার প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকলের সামনে ডাকবেন এবং যে কোন হুর বাছাই করার সুযোগ দেবেন। ( তিরমিজি (২০২১)
নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, যে লোক আমাকে স্বপ্নে দেখে সে শীঘ্রই জাগ্রত অবস্তাতেও আমাকে দেখবে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারন করতে না। (বুখারী ৬৯৯৩)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যদি কেউ জানত নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া কত বড় গুনাহ তাহলে সে ৪০ বছর দাঁড়িয়ে থাকতো, তবুও সামনে দিয়ে যেতো না। (সহীহ বুখারী, ৫১০)

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, বান্দা যখন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যায়, আল্লাহ তখন তাকে ক্ষমা করেন। সুবহানআল্লাহ! ( বুখারী ২৬৬১)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, প্রতিটা মানুষই ভুলকারী, আর ভুলকারীর মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাওবা করে ফিরে আসে আল্লাহর পথে। (তিরমিজি ২৪৯৯)
নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, ফজরের নামজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ, তাহাজ্জুদ। (সহীহ মুসলিম, ১১৬৩)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা নেয়, এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারীঃ ৪৬৬১,৪৬৬২)
আল্লাহ ও রাসূলের বাণী
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমি ইচ্ছা করলে সবাইকে হেদায়ত দান করতে পারতাম, কিন্রু আমার এই কথা অবশ্যই সত্য যে, আমি মানুষ ও জ্বীন ধারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো। ( সূরা আস সাজদাহ ১৩)
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর পথে। [ সূরা বাকারা ২৫৭]
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, তুমি ঐ দিনকে ভয় করো, যেই দিন তোমার মুখ তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে, আর তোমার হাত পা তোমার কৃতকর্মের সাক্ষী দিবে। ( সূরা ইয়াসিন ৬৫)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলে, আমি যখন মু’মিন বান্দার প্রিয় জিনিস দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেই, আর সে ধৈর্য ধারন করে। আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ছাড়া প্রতিদান হিসাবে অন্য কিছু নেই। ( সহীহ বুখারী ৬৪২৪)
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, নিশ্চই আমি কুরআন নাজিল করেছি, এবং আমি এর সংরক্ষক। ( সূরা আল হিজর, আয়াত ৯)
আমি বললামঃ প্রিয় জিনিসটা পেলাম না।
আল্লাহ বলেনঃ তুমি হয়তো এমন জিনিস চেয়েছো তা তোমার জন্য অকল্যাণকর। (সুরা বাকারা, আয়াত ২১৬)
রাসুল (সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যেনো মৃত্যু কামনা না করে, কারণ সে নেককার হলে আরো নেক কাজ করার সুযোগ পাবে, আর বদকার হলে তাওবাহ করে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দির হাসিল করার সুযোগ পাবে। ( মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৯৮)
নবী কারীম (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তা’য়ালা তার উপর দশ বার রহমত বর্ষিত করেন। ( সহীহ মুসলিম ৪০৮)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহবা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমেরা নিরাপদ থাকে। ( সহীজ বুখারী ১০)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, লজ্জা ‘হায়া’ হলো ঈমানের অংশ, আর ঈমানের স্থান হলো জান্নাত। পক্ষান্তরে অশ্লীলতা হলো কঠোরতার অংশ, আর কঠোরতার স্থান হলো জাহান্নাম। ( জামে তিরমিযী, হাদিস ২০০৯)
নবীকে নিয়ে কিছু কথা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী, যিনি মানবজাতির মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে এক আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবনযাপন করা যায়। তাঁর চরিত্র, তাঁর ধৈর্য, তাঁর দয়া ও ক্ষমাশীলতা ছিল এমন এক উদাহরণ, যা কিয়ামত পর্যন্ত সব মুমিনের জন্য অনুকরণীয়। তাই একজন মুসলমান হিসেবে নবীজির (সাঃ) জীবনকে জানা ও অনুসরণ করা শুধু একটি কর্তব্য নয়, বরং এটি আমাদের ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ।
নবীজির (সাঃ) দেখানো পথ অনুসরণ করলে আমরা শুধু দুনিয়ার শান্তিই পাই না, বরং আখিরাতের মুক্তিও অর্জন করতে পারি। তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কেমনভাবে নামাজ আদায় করতে হবে, কিভাবে মানুষের প্রতি দয়া ও ন্যায়বিচার দেখাতে হবে, এবং কিভাবে ছোট-বড় সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সুন্নাহ মানে শুধু কিছু নিয়ম নয়, বরং এটি এমন এক জীবনধারা, যা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে নিয়ে যায়।
জান্নাতের চাবি লুকিয়ে আছে নবীজির (সাঃ) পথ অনুসরণের মধ্যেই। কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন, “যে আমার রাসূলের আনুগত্য করে, সে আমাকেই আনুগত্য করে।” (সূরা নিসা: ৮০) অর্থাৎ, নবীজির (সাঃ) আদর্শকে জীবনে ধারণ করলে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে উঠি। তাই আসুন, আমরা তাঁর শিক্ষাগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করি, তাঁর পথে চলার চেষ্টা করি, যেন একদিন আমরা তাঁর সঙ্গে জান্নাতে সাক্ষাৎ করতে পারি, ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুনঃ
- অবহেলা নিয়ে স্ট্যাটাস
- মনীষীদের উক্তি
- রক্তদান নিয়ে স্ট্যাটাস
- চিন্তাশীল স্ট্যাটাস
- শালিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
- দুপুর বেলার শুভেচ্ছা
- অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উক্তি
- সক্রেটিস এর উক্তি
- শেক্সপিয়ারের উক্তি
- রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস
- হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস বাংলা
শেষ কথা
তো প্রিয় বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের লেখা, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ ও হাদিসের সংগ্রহ। আশা করি এর মধ্যে থেকে কোন না কোন স্ট্যাটাস, ছন্দ, হাদিস কিংবা উক্তি আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এবং আপনি এগুলো আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছেন।
আমাদের নবী (সাঃ)-এর জীবন ছিল ভালোবাসা, সহানুভূতি আর ন্যায়ের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ আমাদের শেখায় কিভাবে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও আল্লাহভীরু জীবনযাপন করা যায়। তাই আসুন, আমরা তাঁর দেখানো পথে চলার চেষ্টা করি এবং তাঁর শিক্ষা অন্যদের কাছেও ছড়িয়ে দিই।
যদি লেখাগুলো ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাতে তারাও প্রিয় নবীর বাণী থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীজির (সাঃ) দেখানো পথে চলার তাওফিক দিন। আমিন।




