Last Updated on 28th December 2024 by জহুরা মাহমুদ
সমালোচনা নিয়ে উক্তি, ক্যাপশন, বাণী ও স্ট্যাটাস নিয়ের আজকের লেখা শুরু করছি। আশা করি আমাদের লেখা গুলো আপনাদের ভালো লাগবে। প্রায় বেশির ভাগ মানূষ অন্যের সমালোচনা করেতে পছন্দ করে, কিন্তু নিজেকে নিয়ে সমলোচনা নিতে পারেন না। আর আমার কথা নয়, জ্ঞানীগুনী জনরাই সমালোচনা নিয়ে অনেক সেরা সেরা উক্তি বলে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে যারা সমালোচনা মেনে নিতে পারে কিংবা সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা রাখেন, দিন শেষে তারাই সফল মানুষ হয়ে উঠেন।
আমরা এখানে আজ যেসব সমালোচনা নিয়ে উক্তি, বাণী, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন গুলো তুলে ধরবো। সেই উক্তি বাণী গুলো আপনারা চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, ইন্সটগ্রাম এ পোস্ট, বার্তা হিসাবেও শেয়ার করতে পারবেন।
সমালোচনা নিয়ে উক্তি ২০২৫
সমালোচনা নিয়ে আমাদের জন্য জ্ঞানীগুনি ব্যাক্তিবর্গা সেরা সেরা উক্তি লিখে গেছেন। যা বর্তমান সময়ের জন্য অনেক মূল্যবান। আর আজ এই পোস্টে আমরা তুলে ধরব সেই সব বাছাইকৃত সমালোচনা নিয়ে উক্তি। এই সব উক্তি, বাণী, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন গুলো আপনারা ভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুকে পোস্ট হিসাবে শেয়ার করতে পারবেন।
যে তোমার সমালোচনা করে, সে তোমাকে শক্তিশালী করে। কারণ সমালোচনা তোমাকে তোমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করে এবং সেগুলোকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে। -ফ্রিডরিখ নিটশে
সমালোচনা থেকে পালিয়ে লাভ নেই; বরং নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলো, যাতে তুমি তা গ্রহণ করতে পারো এবং সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারো। -জন স্টুয়ার্ট মিল
সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু গ্রহণ করা কঠিন। যারা সমালোচনা গ্রহণ করে, তারাই জীবনে সাফল্য অর্জন করে, কারণ তারা জানে কীভাবে নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। -জর্জ বার্নার্ড শ`
যে ব্যক্তি নিজের আত্মাকে জানে এবং নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, সে কখনোই সমালোচনার ভয়ে পিছু হটবে না। বরং সে সমালোচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়। -প্লেটো
প্রকৃত জ্ঞান সেই ব্যক্তি অর্জন করে, যে তার নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে এবং সমালোচনা গ্রহণ করতে পারে।” অর্থাৎ, সমালোচনা আমাদের চিন্তার পরিসর বাড়ায় এবং প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। -সক্রেটিস
কারো সমালোচনা করতে কিন্তু যোগ্যতা লাগে না। কিন্তু সমালোচিত হতে যোগ্যতা লাগে।
যেইদিন থেকে তুমি সমলোচনা নেওয়ার মত মন মানসিকতা তৈরি করতে পারবে, সেই দিন থেকে তোমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
পাশে লোকে তোমাকে নিয়ে যখন সমালোচনা শুরু করে দিবে, তখন তোমাকে বুঝে নিতে হবে তুমি সঠিক পথে আগাচ্ছো।
অন্যের দোষ খোঁজা নিয়ে উক্তি
অন্যের দোষ খোঁজা বা সমালোচনা করা আমাদের সমাজে খুব সাধারণ একটি প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যের দোষ খোঁজার বদলে নিজের ভুল/ত্রুটি খুঁজে বের করা আরও গুরুত্বপূর্ণ, এই কথাটা মানুষ বুঝেন না, বা বুঝতে চান না। এখানে বর্তমান প্রক্ষাপটে সাথে মিল রেখে বাছাইকৃত কিছু অন্যের দোষ খোঁজা নিয়ে উক্তি তুলে ধরবো।
অন্যের দোষ নিয়ে কথা বলার আগে নিজের আত্মাকে পরীক্ষা করো। কারণ তোমার নিজের ভুলগুলো বুঝলে, তুমি অন্যের ভুলে মনোযোগ দেবে না। -সক্রেটিস
অন্যের দোষ না খোঁজে, নিজের দোষ নিয়ে যদি মানুষ চিন্তা করত তাহলে সমাজে এত বৈষম্য থাকতো না।
তোমার মন যখন নিজের দোষ দেখার জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তুমি অন্যের দোষ খোঁজা থেকে বিরত থাকবে। -র্যাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন
অন্যের দোষ খোঁজা যত সহজ, নিজের দোষ ঢাকা তার চেয়ে কয়েক গুন কঠিন।
নিজের বিবেক যখন পরিষ্কার থাকবে, তখন তুমি অন্যের ভুল নিয়ে চিন্তা করবে না। সত্যিকারের নৈতিকতা হলো নিজের ভুলগুলো ঠিক করা, অন্যের নয়। -ইমানুয়েল কান্ট
মানুষ অন্যের দোষ খোঁজে সারাদিন যেই সময় নষ্ট করে, তার অর্ধেক যদি নিজের মেধা কাজে লাগানোর কাজ করতো তাহলে সে উন্নিত উচ্চ শিখরে পৌছাতে পারতো।
যারা অন্যের দোষ খুঁজে, তারা প্রায়ই নিজেদের অবহেলিত দোষগুলোকে ভুলে যায়। একজন প্রকৃত জ্ঞানী নিজেকে সংশোধন করে, অন্যকে নয়। -জ্যঁ-জ্যাক রুশো
বদনাম নিয়ে উক্তি
কখনোই কাউকে না জেনে বা পুরোটা না বুঝে বদনাম করা উচিত নয়। না জেনে কথা বলা বা বদনাম করাতে অন্যের মানসম্মান জড়িত আছে, এ কথাটা আমরা অনেকি বুঝতে পারি না। বদনাম নিয়ে আমাদের জ্ঞানী ব্যাক্তি বর্গ, বুজুর্গ গনেরা দারুন দারুন উক্তি লিখে গেছেন। আর আমরা এখানে তুলে ধরবো বাছাইকৃত কিছু বদনাম নিয়ে উক্তি।
অন্যের বদনাম তোমার উপর প্রভাব ফেলবে না যদি তুমি নিজেকে ভালোভাবে জানো এবং নিজের নৈতিকতায় স্থির থাকো। বদনাম হলো এমন একটি ছায়া, যা সত্যকে আড়াল করতে পারে না। -সক্রেটিস
বদনাম এড়াতে হলে তুমি কিছুই করো না, কিছুই বলো না এবং কিছুই হও না।” অর্থাৎ সমাজে কিছু করলেই বদনাম আসতে পারে, কিন্তু তাই বলে নিজেকে থামানো উচিত নয়। -অ্যারিস্টটল
যে অন্যকে বদনাম দেয়, সে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি অন্যের বদনামে কান দেয়, সে নিজের নৈতিক স্থিতি হারায়। -কনফুসিয়াস
যে সমাজ তোমাকে বদনাম দেয়, সে হয়ত তোমার ক্ষমতা, সাহস, এবং নৈতিকতা দেখে ভয় পায়। বদনামকে নিজের উপর প্রভাবিত করতে দিও না। বরং তোমার সত্যিকারের পরিচয় দিয়েই উত্তর দাও। -ফ্রিডরিখ নিটশে
মানুষ যা বলবে তা নিয়ে চিন্তা করলে কখনো শান্তি পাবে না। বরং তুমি নিজের পথের উপর দৃঢ় থেকো এবং বদনামের ভয়ে পিছু হটবে না। -মার্কাস অরেলিয়াস
বদনাম হলো তোমার সাহসিকতার জন্য সমাজের প্রতিক্রিয়া। যারা ভয়ে গুটিয়ে থাকে, তারা কিছুই অর্জন করতে পারে না। বদনাম হলো সেই মূল্য, যা সাহসী মানুষই দেয়। -জর্জ বার্নার্ড শ
কুটনামি নিয়ে উক্তি
বর্তমান প্রক্ষাপটে কুটনামি বলতে সাধারণত বুঝানো হয় অন্যের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে চালানো গোপন ষড়যন্ত্র বা পেছনে কথা বলা। এটি সমাজের জন্য এক বিষাক্ত প্রভাব। এখানে কিছু ইউনিক কুটনামি নিয়ে উক্তি তুলে ধরা হল।
কুটনামি একজন মানুষের আত্মার দূষণ, যা অন্যদের ক্ষতির চেয়ে নিজের মানসিক ক্ষতিই বেশি করে। -কনফুসিয়াস
কুটনামি মনোভাব দিয়ে কখনো সত্যিকারের বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা অর্জন করা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
যে মানুষ সত্যিকারের সৎ, সে কখনো কুটিল হতে পারে না। কুটনামি হলো দুর্বল মনের প্রতিচ্ছবি। -লাও জু
কুটনামি একটি তিক্ত ফল, যা ক্ষণিকের আনন্দ দিলেও অন্তরকে চিরকালের জন্য তিক্ত করে তোলে। -রাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন
কুটনামি হলো সেই সাপ, যা অন্যকে কামড়ানোর আগে নিজেকেই বিষাক্ত করে তোলে। -ফ্রিডরিখ নিটশে
রিলেটেডঃ বন্ধু নিয়ে স্ট্যাটাস: 100+ Best Friend Status Bangla
পরনিন্দা নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামে পরনিন্দা বা গীবত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এবং এটি একটি বড় পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ইসলামে। পরনিন্দা হচ্ছে কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ, ভুল, ত্রুটি নিয়েকথা বলা অন্যের কাছে। যা সে শুনতে পেলে কষ্ট পাবে। এখানে জনপ্রিয় কিছু হাদিসের আলোকে পরনিন্দা নিয়ে ইসলামিক উক্তি তুলে ধরা হলো।
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “তুমি কি জানো গীবত কী? এটি হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা সে অপছন্দ করে। -হাদিস (সহীহ মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের দোষ নিয়ে কথা বলে, আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন তার গোপন দোষ প্রকাশ করবেন। -(তিরমিজি)
পরনিন্দা হলো একজন মানুষের মনুষ্যত্বকে হ্রাস করে এবং তার সৎ চরিত্র নষ্ট করে। -হযরত আলী (রাঃ)
গীবত/পরনিন্দা হলো আগুনের মতো, যা একজন মানুষের ভালো কাজগুলোকে পুড়িয়ে ফেলে। -হযরত হাসান বসরি (রহ.)
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অন্যের প্রতি কোন খারাপ কথা না বলে। -হাদিস (সহীহ বোখারি)
রিলেটেডঃ বাংলা শর্ট ক্যাপশন: ১৯৯+ শর্ট ক্যাপশন দিয়ে প্রকাশ করুন অনুভুতি
গীবত ও চোগলখোরী নিয়ে উক্তি
গীবত (পরনিন্দা) এবং চোগলখোরি, পরচর্চা বা অপপ্রচার, ইসলামে অত্যন্ত গুরুতর পাপ হিসেবে বিবেচিত। গীবত, চোগলখোরি, পরচর্চা বা অপপ্রচার এই অভ্যাস মানুষের মধ্যে শত্রুতা, অবিশ্বাস এবং সামাজিক বিভেদ সৃষ্টি করে। এখন আমরা বর্তমান প্রক্ষাপটে গীবত ও চোগলখোরি নিয়ে বাছাইকৃত উক্তি তুলে ধরব।
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -(সহীহ বোখারি ও সহীহ মুসলিম)
যে ব্যক্তি চোগলখোরীর মাধ্যমে দুই বন্ধুর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে, তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। -হযরত হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান (রাঃ)
চোগলখোরী সেই বিষাক্ত আগুন, যা হৃদয়ে প্রবেশ করে এবং সম্পর্কের সমস্ত ভালোবাসাকে পুড়িয়ে দেয়। -হযরত হাসান বসরি (রহ.)
চোগলখোর সেই ব্যক্তি, যে দুই হৃদয়ের মাঝে দেওয়াল নির্মাণ করে এবং মনের শান্তিকে ধ্বংস করে দেয়। -ইমাম গাজ্জালি (রহ.)
কোনো চোগলখোরের কথা মেনে চলো না, যে সমাজে শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং মিথ্যাচার প্রচার করে। -(সুরা ক্বলম, আয়াত ১১)
রিলেটেডঃ রাগ নিয়ে উক্তি: ছেলে মেয়েদের রাগ নিয়ে ইসলামিক উক্তি
শেষকথা
অনেক সময় সমালোচনা হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যেখানে ব্যক্তিকে হেয় করা বা অবমূল্যায়ন করাই মূল উদ্দেশ্য। এই ধরনের সমালোচনা সাধারণত নেতিবাচক মানসিকতা ও বিদ্বেষ থেকে আসে। এমন অনুভুতি প্রকাশ করতে উপরের অন্যের সমালোচনা নিয়ে উক্তিগুলি আপনার কাজে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকে আমাদের লেখা, লেখাটি ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। আজকের মতো এখানেই বিদায় দেখা হবে আগামী লেখাতে।