Last Updated on 1st November 2024 by জহুরা মাহমুদ
প্রতিটা ধর্মেই বাবা মা পরে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার মর্যাদা পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, আজকে আমরা আলোচনা করবো স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস, হাদিস, ও উক্তি নিয়ে।
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ককে সুন্দর ও মজবুত ভিত্তির উপর স্থাপন করা হয়েছে। এটি কেবল দুটি মানুষের মিলন নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী গড়ে তোলা একটি পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধন পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্মান, বিশ্বাস ও দায়িত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস
ইসলামের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রেখে আমরা বেশির ভাগ মানুষ চাই ইসলামিক আর্দশে জীবন ঘঠন করেতে। কিংবা ইসলামিক আর্দশে স্বামী স্ত্রী সংসার শুরু করতে। ইসলামে পরিপূর্ণ ভাবে স্বামী স্ত্রীর জীবন ঘঠনের বিধান দেওয়া আছে। আমরা অনেকেই জানি না। তাই গুগলের শরণাপন্ন হই। সেজন্য আজকে আমরা আপনাদের জন্য হাদিসের আলোকে সেরা সেরা অসাধারন হাদিসে উল্ল্যেখ যোগ্য কিছু স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস নিয়ে হাজির হয়েছি।
নবী (সাঃ) বলেছেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সাথে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে, আর তার স্ত্রী অস্বীকার করে, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেস্তারা ঐ মহিলার ওপর লা’নত বর্ষ্ণ করতে থাকবে। (সহীহ বুখারী ৫১৯৩)
উত্তম স্বামী-স্ত্রীরা যে কোন পারিবারিক সমস্যা নিয়ে একে অপরের সাথে খোলামেলা কথা বলেন। একে অপরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা উত্তম স্বামী স্ত্রীর পরিচয়।
স্বামীকে রেগে যেতে দেখলে স্ত্রী চুপ করে থাকবে, এবং স্ত্রীকে রেগে যেতে দেখলে স্বামী চুপ করে থাকবে, কারন পানি আগুনকে নিবাতে পারে, আগুন আগুঙ্কে নিভাতে পারে না, বরং আরও বাড়িয়ে দেয়। ( হযরত উমর (রাঃ)
আল্লাহ সেই মহিলার উপর করুণার দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর শুকরিয়া আদায় করে না আবং স্বামীকে নিজের জন্য পরিপূর্ণ মনে করে না। [সুনানে কুবরা-নাসাঈ, ১৫১১৭]
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন, “পুরুষদের জন্য তাদের স্ত্রীদের মধ্যে তাদের প্রতি ভালোবাসা নির্ধারণ করে রেখেছেন।” ([সূরা রুম: 21])
সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সংসার গড়ে তোলার জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই চেষ্টা , ও ইসলামের নির্দেশাবলী অনুসরণ করলে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনযাপন করা সম্ভব।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। আল্লাহ বলেন, “পুরুষরা তাদের নারীদের উপর অধিকারী এবং নারীরা তাদের পুরুষদের উপর অধিকারী।” ([সূরা বাকারা: 228])
সংসারে যেকোনো সমস্যার সমাধান কথোপকথন ও আলোচনার মাধ্যমে করা অতি উত্তম স্বামী স্ত্রীর কাজ। স্বামী স্ত্রীর উচিত সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করা, এবং একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাস থাকা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, “তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে অভিভাবক নির্বাচন করো এবং তাদের সাথে তোমাদের স্ত্রীদের যুদ্ধ করতে বলো।” ([সূরা নিসা: 34])
স্বামী-স্ত্রীর উভয়েরই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা উচিত। স্বামী হলেন পরিবারের কর্তা, তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহন করবেন। স্ত্রী হলেন ঘরের রাণী, তিনি পরিবারের যত্ন নেবেন এবং সন্তানদের লালন-পালন করবেন।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক:
ভুল-ত্রুটি মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ভুল-বোঝাবুঝি ও মনোমালিন্য হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরুন এবং একে অপরকে ক্ষমা করে দিন।
স্বামী-স্ত্রীর উভয়েরই সুন্দর আচরণ প্রদর্শন করা উচিত। একে অপরের প্রতি দয়া, শ্রদ্ধা, ও ভালোবাসা প্রকাশ করুন।
স্বামী-স্ত্রীর উভয়েরই সন্তানদের সঠিক শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে ইসলামের শিক্ষা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিন।
স্বামী-স্ত্রীর উভয়েরই পারস্পরিক সহযোগিতা করা উচিত। ঘরের কাজ, সন্তানদের লালন-পালন, এবং পরিবারের অন্যান্য দায়িত্ব পালনে একে অপরকে সাহায্য করুন।
সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দোয়া করতে হয় স্বামী স্ত্রী দুইজন মিলে।
দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বামী স্ত্রী দুইজনেরই। একে অপরকে বুঝতে ও গ্রহণ করতে সময় লাগে। ধৈর্য ধরে চলুন এবং সম্পর্ককে আরও মজবুত করুন।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে শান্ত ও ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলুন।
রিলেটেডঃ কন্যা সন্তানের জন্মদিনের শুভেচ্ছা, বাবা-মায়ের মনের কথা
জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি
রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম ব্যক্তি, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম।
যে ঘরে স্বামী স্ত্রী একি কম্বলের নিচে ঘুমাবেন, ঐ ঘরে আল্লাহর রহমত নাজিল হতে থাকে। –বুখারী।
স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের দরজা, যে দরজা দিয়ে সে জান্নাতে অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (তিরমিযি)
রাসূল (সাঃ) বলেন, যে স্ত্রী অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে, সে রমনীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম রমনী।
স্বামী খুশি থাকা অবস্তায় কোন স্ত্রী মারা গেলে সে জান্নাতি। –তিরমিযী (১১৬৯)
তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি তোমাদের উপর অধিকার আছে এবং তোমাদের উপর তাদেরও অধিকার আছে। (তিরমিযি)
তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণ করো।(নিসা:১৯)
স্বামী যখন ঘরে থাকেন তখন স্ত্রী তার ঘর থেকে বের হবে না, যদি না তার স্বামীর অনুমতি থাকে।(আবু দাউদ)
স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব।(তিরমিযি)।
যেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকে, আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন। (তিরমিযি)
একজন স্বামী যখন তার স্ত্রীর দিকে তাকায় এবং স্ত্রী তার স্বামীর দিকে তাকায়, তখন তাদের উভয়েরই গুনাহ মাফ হয়ে যায়।(তিরমিযি)
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে সত্যবাদী হও এবং একে অপরের প্রতি ধৈর্য্য ধরন করো ।(ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ্ আমাদেরকে একে অপরের জন্য ভালো সঙ্গী করে তুলুন এবং আমাদের সংসারে সুখ ও শান্তি দান করুন।
রিলেটেডঃ স্বামীকে নিয়ে ভালোবাসার স্ট্যাটাস, ছন্দ, কবিতা, উক্তি
স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক ক্যাপশন
আল্লাহ্ তায়ালার ভালোবাসা ও জান্নাত লাভের জন্য স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ করুন।
স্বামী ও স্ত্রীর মিলে শরীয়তের নিয়ম মেনে সংসার পরিচালনা করলে সংসারে রহমত ও বরকত থাকে।
স্বামী ও স্ত্রী একজন আরেকজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং একজন আরেকজনের সাথে পরামর্শ করে যে কোন সিদ্ধান্ত নিন। এতে আল্লাহর রহমত থাকবে।
স্ত্রীর প্রতি ধৈর্যশীল হতে হবে স্বামীকে। এবং হো্ক নিম্নমানের ভুলত্রুটি ক্ষমা কারাই ইসলামের দৃষ্টিতে বিনয়ে বলা হয়।
ইসলামে বলা হয় স্বামী যেনো তার স্ত্রীর যত্ন নিতে এবং তার সুখ-দুঃখে সঙ্গী হতে।
স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা একজন মুসলিম স্বামীর কর্তব্য।
মুসলিম ধর্মে বলা হয় স্ত্রী যদি ধর্মীয় জ্ঞান কম থাকে, স্ত্রীর ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা স্বামীর দ্বায়ীত্ব।
সবচেয়ে উত্তম স্বামী স্ত্রীর তারা যারা এক সাথে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
আল্লাহ্র আদেশ নির্দেশ মেনে চলা ও আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকা প্রতিটা উত্তম স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য।
স্বামীর আদেশ মেনে সংসার পরিচালনা করা উত্তম স্ত্রীর কর্তব্য।
বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রী দুইজনেরই উচিত আল্লাহ্র ভয় ও তাকওয়া অবলম্বন করা।
স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সৎ ও বিশ্বস্ত থাকা জরুরি। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বজায় রাখুন।
সুন্দর ও সুখী পারিবারিক জীবন গড়ে তোলার জন্য স্বামী স্ত্রীর দুইজনের সমান প্রচেষ্টা থাকা উত্তম।
জীবন সঙ্গী নিয়ে হাদিস
দাম্পত্য জীবনে সুখ, শান্তির জন্যে দ্বীনদার জীবনসঙ্গীর কোন তুলনা হয়না, একজন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী ইহকালের ও পরকালের জন্যে আল্লাহর তরফ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার। পবিত্র কোরআনে ও অনেক হাদিসে দ্বীনদার জীবনসঙ্গী সম্পর্কে অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে। এমনকি আল্লাহ তাওলা বলেছেন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়ার বেশি বেশি দোয়া করতে। এছাড়া দ্বীনদার জীবনসঙ্গী সম্পর্কে রয়েছে অনেক হাদিস। নিচে সেসব হাদিস থেকে শ্রেষ্ট কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো।
স্বামী জান্নাতের দরজা, স্ত্রী ঘরের জান্নাত। – হাদিস।
চরিত্রহীন স্বামী ধনী হওয়ার চেয়ে গরীব আর্দশবান হওয়া উত্তম। হাদিস।
স্বামী চরিত্রহীন হলে রাজ প্রাসাদ ও জেল খানা মনে হয়। আর স্বামী চরিত্রবান হলে কুড়ে ঘর ও রাজ প্রাসাদ মনে হয়।
স্ত্রী স্বামীর পোশাক, স্বামী স্ত্রীর রক্ষাকর্তা। – হাদিস।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গী, একে অপরের সাহায্যকারী। – কোরআন।
ভালো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক জান্নাতের পথ উন্মোচন করে। – হাদিস।
স্বামী স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ করুন, কারণ তারা আপনার আমানত। – হাদিস।
স্ত্রী স্বামীর ঘরে সুখ-শান্তি বয়ে আনে। – হাদিস।
স্বামী স্ত্রীর প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করুন, আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন। – হাদিস।
স্ত্রী স্বামীর সম্মান করুন, স্বামী স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখান।- ইসলাম।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাস ও সম্মান অত্যাবশ্যক। – ইসলাম।
ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলা উত্তম স্বামী-স্ত্রীর তাকওয়া। – ইসলাম।
একে অপরের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উত্তম স্বামি স্ত্রীর পরিচয়। – ইসলাম।
উত্তম স্বামী স্ত্রী একে অপরের সাথে উপহার বিনিময় করে থাকেন। – ইসলাম।
উত্তম স্বামী-স্ত্রীর সব সময় একে অপরের সাথে প্রতিশ্রুতি পূরণ থাকেন। – ইসলাম।
উত্তম স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে মিলেমিশে কাজ করে থাকেন। – ইসলাম।
উত্তম স্বামী-স্ত্রীর উচিত সব সময় একে অপরের সাথে সম্মানের সাথে আচরণ করেন। – ইসলাম।
উত্তম স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে থাকেন।
উত্তম স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে সময় কাটান।
রিলেটেড পোস্ট: বাংলা স্টাইলিশ ক্যাপশন ফেসবুক ২০২৪।সেরা ফেসবুক ক্যাপশন বাংলা
শেষ কথা
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও বোঝাপড়া থাকলে সংসার সুন্দর হয়। একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল হলে সংসারে শান্তি ও সুখ বজায় থাকে। আল্লাহ আমাদের সকলকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার তৌফিক দান করুন।
আশা করি আমাদের স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস নিয়ে লেখা এই সামান্য চেষ্টা, একটু হলেও আপনাদের উপকারে আসবে, আর আমাদের ইসলামিক হাদিসে কোন ভূলত্রুটি হলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা ভুলত্রুটি গুলা শুদ্ধে নেওয়ার চেষ্টা করবো।